অংক ভাইয়া 📚 চমক হাসান

Akibur Rahman (Akib)
8 min readJul 24, 2021

এই পোস্টে আমি আলোচনা করবো, চমক হাসান ভাইয়ের লেখা অংক ভাইয়া বইটি নিয়ে। এই বইতে গণিতের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে, যে প্রশ্নগুলো নেয়া হয়েছে চমক হাসান ভাইয়ের ফেসবুক পেজ থেকে এবং তার নিজের মনে জেগে থাকা প্রশ্নগুলোর। বইটি এমনভাবে লেখা হয়েছে যে, আপনি চাইলে দুই ভাবে পড়তে পারেন। আপনি সরাসরি প্রশ্ন উত্তর অনুযায়ী পড়তে পারেন, আপনার যে প্রশ্ন দরকার সেই প্রশ্নের সরাসরি করতে পারেন বইয়ের সূচিপত্র দেওয়া আছে। আর আরেকভাবে পড়তে পারেন সেটা হল, গল্পে গল্পে। আমার মতে যদি আপনি গল্প করতে না পারেন তাহলে আপনি বইয়ের আসল মজাটাই হারিয়ে ফেলবেন।

Onety one, Onety two না হয়ে Eleven, Twelve হল কেন? সাড়ে এক, সাড়ে দুই না হয়ে কেন দেড় বা আড়াই হল কেন? এক ঘন্টায় ৬০ মিনিট কেন, অন্য কিছু তো হতে পারত? সব সময় অজানা রাশির মান X ধরা হয় কেন, a, b, c, d হল না কেন? পিথাগোরাসের উপপাদ্য কোথায় কাজে লাগে ? আমরা কি ছবি আকি না লিখি? পাইয়ের মান অত ঘর জেনে লাভ কি ? কিভাবে মুখে মুখেই বর্গ ও ঘন বের করা যায়? গানের সাথে গণিতের সম্পর্ক কোথায়? 0 ঋণাত্মক না ধনাত্বক? এরকম মোট ৮৯ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে।

বইটিতে প্রশ্নের উত্তর গুলো এত সুন্দর করে দেওয়া হয়েছে যে, আপনি যদি কোন একটা বিষয় না জানেন সেই বিষয়টি আগে জানানো হয়েছে, তারপরে সেই বিষয়টার ওপর নির্ভর করে যে জিনিসটা আপনাকে বুঝতে হবে সেটাকে পরে বুঝানো হয়েছে। একদম ধারাবাহিকভাবে কোন প্রকার এলোমেলো কিছু নেই।

গল্পের চরিত্র সমূহ

এই গল্পের প্রধান চরিত্র হলো ৬টি। টেনশন টিনা, বিটলা বান্টি, তুখোড় তন্বী, অবাক পৃথ্বি বা পৃথিবী, নজিবুল্লাহ মাস্টার ও অংক ভাইয়া। নামগুলো কেমন অদ্ভুত লাগতেছে, তাই না? এই নামগুলো দেওয়ার নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। গল্পের মাঝে আমরা সেই কারণগুলো আস্তে আস্তে জানতে পারবো।

গল্পের শুরু

হাতে বই, চক, ডাস্টার আর কালো রংএর বেত হাতে নজিবুল্লাহ মাস্টার হেঁটে যাচ্ছে। যেদিক দিয়ে হেটে যাচ্ছে সেইদিক একদম নিরব হয়ে যাচ্ছে, যেন কবরস্থান। হেঁটে হেঁটে তিনি দশম শ্রেণীর শাখার ক্লাসে গিয়ে ঢুকেন।

নজিবুল্লাহ মাস্টার এক অদ্ভুত ধরনের লোক। তার চরিত্রে ভালো-মন্দ সবগুলোই একত্রে আছে। তিনি তার ক্লাসে কাউকে কোন প্রশ্ন করতে দেন না, যদি কেউ প্রশ্ন করে তাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে দেন। আর তিনি সম-অধিকারে বিশ্বাসী, কোনদিন যদি আগে ক্লাসে কোন ছেলেকে শাস্তি দেয়, তো পরের দিন নিশ্চিত কোনো একটা মেয়েকে তিনি শাস্তি দিবেন। আজকে সবাই বুঝে ফেলেছে, তিনি আজকে কোন এক মেয়েকে শাস্তি দেবেন। কারণ গত ক্লাসে তিনি কোন এক ছেলেকে শাস্তি দিয়েছিলেন, পিথাগোরাসের উপপাদ্য কোথায় কাজে লাগে এই কথাটা জিজ্ঞাসা করার জন্য!

তারপর নজিবুল্লাহ মাস্টার বলল, “এই লাল ব্যাগ তুই দাঁড়া।” আশেপাশের সব দিক দেখে টিনা কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়ালো। কারণ টিনারই শুধু লালবাগ সে মনে মনে ভাবতে লাগল “কেন যে লাল ব্যাগটা কিনতে গেছি!” তারপর নজিবুল্লাহ মাস্টার টিনাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করল, কিন্তু টিনা কোনটার উত্তর দিতে পারল না। আর নজিবুল্লাহ মাস্টার তাকে অকথ্য তিরস্কার করতে লাগলো।টিনা স্যারের অপমানে ভেঙে পড়ে তার প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ভুলে গিয়ে নিজেকে একজন আদর্শ কাজের বুয়া হিসেবে দেখতে পাচ্ছে। আর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতেছে, “ও আল্লাহ গো, তুমি এই পৃথিবীতে অংকের মত ভয়াবহ ব্যাপারটা কেন দিলা, কি দরকার ছিল, আর দিলা তো দিলা নজিবুল্লাহ মাস্টারকে দিলা, কেন আল্লাহ, হোয়াই…”

তারপর টিনা তার আবেগের ৪০ ভাগ দুঃখ-কষ্ট, ৩০ ভাগ হতাশা, ২০ ভাগ রাগ আর বাকি ১০ ভাগ লেখকও জানে না। এই আবেগ নিয়ে সে মেহগনি গাছের নিচে বসে আছে কান্নার জলে ভেজা জামার হাতা, লাল গাল, ফোলা চোখ নিয়ে।তাকে দেখে নিপা তাকে বোঝাতে চেষ্টা করে। কিন্তু টিনা তার বোঝানো কি প্রতিবাদ করে বলতে থাকে, “দেখ নিপা তুই বিষয়টা বুঝতে পারতেছিস না। এটা শুধু অংক না, এটা জীবনের ব্যাপার। দেখ এই সহজ অংক আমি পারিনা, আমি অংকে ফেল করব। এসএসসির রেজাল্ট খারাপ করব। বাবা রাগ হবেন, মাকে খেপে যাবেন। আমাকে ধরে অজ পাড়াগাঁয়ে দিয়ে দিবেন। আমার স্বামী হবে ভয়ানক খারাপ লোক, তার ওপর শ্বশুর-শাশুড়ি যৌতুকের জন্য মারধর করবে। পালিয়ে আসব বাসায়, মা-বাবা বাসায় ঢুকতে দিবেনা। আমি তখন কই যাব দোস্ত, রাস্তায় ঘুমাবো কিভাবে? আমিতো তুলোর বালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারি না। আর রাস্তায় যদি মশা কামড়ায়? ডেঙ্গু টেঙ্গু যদি হয়ে যায়? হাসপাতালে টাকা দেবো কিভাবে? আমি কি এভাবেই মরে যাব? তখন একটু চুপ করে থেকে বলল,” তুই পারিসও, এটুকুর জন্য তুই মরে গেলি?”এজন্য সবাই টিনাকে “টেনশন টিনা” বলে ডাকে।

যখন টিনা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতেছিল ঠিক তখন দুই কিলোমিটার দূরে, গণিতের প্রেমে মুগ্ধ হয়ে হাটছে আর ভাবছে গণিত কতই না সুন্দর গণিত, একটা হ্যাংলা পাতলা ছেলে। এর মাধ্যমে কিভাবে লোকজন পৃথিবীর ব্যাসার্ধ মেপে ফেলেছে, ভবিষ্যতের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে, এক কম্পিউটার দিয়ে কিভাবে সবকিছু বিশ্লেষণ করছে। এ সমস্ত ভেবে ভেবে তার বুকের ভেতরে অজানা আবেগে থৈথৈ করে উঠছে।এই হ্যাংলা পাতলা ছেলেটির নাম তুর্য, বুয়েটে পড়ালেখা করে আর গণিত অলিম্পিয়াডের সাথে যুক্ত।

টিনার মা, তন্বীর মা আর বান্টির মা বসে আছেন হোসেন আরার বাসায়। হোসেন আরা হলেন তূর্যের মা। তারা সকলেই বলতে এসেছে, তূর্য যেন টিনা, তন্বী, বান্টি, এদেরকে গণিতে একটু শিখিয়ে দেয়। কারণ তারা নজিবুল্লাহ মাস্টারের জন্য গণিত কে ভয় পেতে বসেছে। আর বান্টিকে তো প্রশ্ন করার জন্য, নজিবুল্লাহ মাস্টার ফেল করিয়ে দিয়েছে। এজন্য বান্টির মা খুব চিন্তিত, তাই তারা খুব অনুরোধ করতেছেন হোসেন আরাকে। আর তারা তূর্যের জন্য বসে অপেক্ষা করছিলেন। তখনই তুর্য বাড়িতে আসলো এবং সবাইকে সালাম দিলো। তারপর হোসেন আরা তুর্যকে বলল, “ইনারা তোর কাছে এসেছেন। তোকে টিনা টোন নেই তন্নী আন্টি এদেরকে গণিত শিখিয়ে দিতে হবে।” তখন তূর্য এটা শুনে বলল, “ওরা যদি সন্ধ্যার সময় আসতে পারে আমি ওদেরকে শিখিয়ে দিতে পারব।” এই শুনে পৃথ্বীর মা হোসেন আরাকে অনুরোধ করতে লাগল, পৃথ্বীকেও যেন একটু পড়ায়।

তারপরের দিন সন্ধ্যায় তারা চারজন সূর্যের কাছে অংক শিখতে চলে আসলো। তূর্য তাদেরকে গল্প শোনাল সেই কিভাবে গণিত অলিম্পিয়াডের সাথে যুক্ত হলো। তারপরে গণিত জিনিসটা কিভাবে প্রকৌশল এর সাথে যুক্ত, কিভাবে গণিতে দালানকোঠার বানানোর হিসাব আগেই করে, তার সাথে সাথে গণিতবিদদের মজার মজার সব গল্প ওদেরকে শুনালো। এসমস্ত শোনার পরে তাদের মনে হলো গণিত মনে হয় আসলেই একটি মজার জিনিস, কিন্তু এই মজার জিনিস তাদেরকে কেউ বলেনি শুধু বলেছে ভয়ের কথা। তারা তূর্যের ভক্ত হয়ে যায় আর তূর্যের নাম অংক ভাইয়া দিয়ে দেয়।

তারপর অংক ভাইয়া বলল “তোমরা আমাকে গণিত নিয়ে ইচ্ছা মত প্রশ্ন করতে পারো উল্টাপাল্টা আবোল-তাবোল যেমন খুশি তেমন।” তার কথা শুনে কেউ প্রশ্ন করার সাহস হচ্ছিল না। কিন্তু বান্টি প্রশ্ন করে বসলো ভাইয়া Twenty One, Twenty Two কিন্তু Onety One Onety two না কেন? বান্টি প্রশ্ন করার পর পর তারপর আস্তে আস্তে সবাই একটু সাহস করে আরো প্রশ্ন করতে লাগলো। ভাইয়া সাড়ে এক, সাড়ে দুই না দেড়, আড়াই? তারপরে বাংলাদেশের আয়তন নাকি ক্ষেত্রফল? অংক ভাইয়া সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিল।তারপর সে তাদেরকে একটি ধাঁধা দিয়ে প্রথম দিনের মতো ক্লাস শেষ করা হলো। অংক ভাইয়া বুঝতে পারল, তাদের ভেতরকার ভয়টা আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাচ্ছে। তারা গণিত নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে, গণিতের আনন্দ পেতে শুরু করেছে। পরের দিন তারা সকলেই ৫ মিনিট আগেই অংক ভাইয়ার বাড়িতে উপস্থিত।অংক ভাইয়া তখন তাদেরকে সংখ্যা নিয়ে বলতে শুরু করল, সংখ্যার শুরু কোথায়? ৬০ মিনিট ১ ঘন্টা, ১২ বছরে ১ যুগ। কেন ৬০, কেন ১২? কেন ২৫ বা ২৬ নয়? বৃত্ত কেন ৩৬০ ডিগ্রি? শূন্য দিয়ে ভাগ করা যায় না? মৌলিক সংখ্যা কি? ফিবোনাচি সিরিজ কোথা থেকে এলো? সংখ্যা নিয়ে এরকম বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তাদেরকে একটা ধাঁধা দেওয়া হলো।ধাঁধা টি হল ডায়াফেন্টাসের বয়স নিয়ে। তার কবরের ফলকের উপর একটি ধাঁধা লেখা আছে। সেই ধাঁধার উত্তর হলো সে কত বছর বেঁচে ছিলেন। আজকে তন্বীরা এসে বসে রয়েছে অংক ভাইয়া খবর নেই, তার মনে ছিল না যে তার ছাত্রছাত্রীরা তার অপেক্ষায় আছে। সে তার বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে ছিল। মনে হতেই সে তাড়াহুড়া করে চলে আসে এবং এসে দেখে তারা পিঠা খাচ্ছে। সে তখন মুখের ভিতর নিয়ে বলতে থাকে আডকেবীডগনিট। সবাই তার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো কি হলো তারপর সে পিঠা সম্পূর্ণ পেটের ভিতর পুরে নিয়ে বলল “আজকে বীজগণিত।” তারা আজ জানতে পারে, বীজগণিত ,পাটিগণিত এই নামগুলো কিভাবে এসেছে?কেন এক্স ধরা হয় এবিসিডি না ধরে? অত বীজগণিত শিখে কি হবে? মনে মনে বর্গ আর ঘন করার উপায়, লগের রহস্য কি? মনে মনে বর্গ বের করে বের করতে শিখে তারা তো মহাখুশি। পরের দিন স্কুলে গিয়ে তারা জানতে পারে, নাজিবুল্লাহ মাস্টার জেনে গেছে যে তারা অঙ্ক ভাইয়ার কাছে গণিত পড়ে। তখন নজিবুল্লাহ মাস্টার তাদেরকে বলে দেয়, “সাহস থাকে তো ওকে আমার সাথে দেখা করতে বলিস।” তারপর সন্ধ্যায়, তারা অংক ভাইয়া কে নিয়ে নাজিম উল্লাহ মাস্টারের কথা বলে। মুজিব উল্লাহ মাস্টারের কথা শুনে অংক ভাইয়া একটু উত্তেজিত হলো। তারপর তাদেরকে ফাংশন কী কাজে লাগে? বর্গমূলের চিহ্ন টা কোথা থেকে এলো? কেন পরম মান এরপরে প্লাস মাইনাস চিহ্ন দিতে হয় কেন ? লিমিট কি? অনির্ণেয় মান কি? এগুলো নিয়ে তাদেরকে বলতে থাকে। তারপরে সব শেষে তাদেরকে চোখের ক্ষেত্রফল বের করার একটা ধাঁধা দিয়ে সেই দিনের জন্য ক্লাস শেষ করা হয়। নজিবুল্লাহ মাস্টারের সাথে কথা বলে তন্বী, পরের সোমবারে দেখা করার দিন ঠিক করে। আবার তারা আজকে এসে হাজির আজকে অংক ভাইয়া তাদেরকে জ্যামিতি নিয়ে বলতে শুরু করেন। জ্যামিতির শুরু হল কোথা থেকে? বিন্দু কি? কলম দিয়ে আঁকা আর পেন্সিল দিয়ে আঁকা বিন্দু কি সমান? পিথাগোরাসের উপপাদ্য কি কাজে লাগে? উপপাদ্য দিয়ে কিভাবে আইনস্টাইনের সূত্র প্রমাণ করা যায়? পাইয়ের মান কেন 22/7? পাইয়ের মান এতো ঘর জেনে লাভ কি? গ্রেডিয়েন্ট কি? আমরা ছবি আঁকি না লিখি ? এগুলা নিয়ে যারা শেষে সব শেষে তারা মজার জিনিস থাকে সেটা হল শিশু ক্যালকুলাস। আজকে আবারো অংক ভাইয়া দেরি করেছেন। তাই তারা গানের আসর বসিয়েছে, এই আসরে নজরুল সঙ্গীত গাইছে তন্বী।সেই গান অংক ভাইয়া দরজার পাশ থেকে শুনছিলেন। এই গান শোনার পরে তার মাথায় আসলো আজকে গণিতের সাথে গানের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলবে।আর আজকে সা-রে-গা-মা এর গণিত এবং এ-মাইনর কর্ড কি? এইসব নিয়ে। তারপর তো তারা অবাক, গান গাইতে গেলও আবার গণিত শিখতে হবে নাকি? আজকে অংক ভাইয়া তাদেরকে ত্রিকোণমিতি নিয়ে শেখাবেন। সকলে প্রশ্ন শুরু করলো, সাইন, কস নামগুলো কোথা থেকে এলো? ত্রিকোণমিতি কোন কাজে লাগে? বিভিন্ন কোণের মান কিভাবে বের করতে হয়।সবশেষে তারা জানতে পারল পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরতম সমীকরণটি সম্পর্কে। তারা জানতে পেরে খুব আনন্দিত, কিন্তু তারা মনে মনে খুব চিন্তিত। কারণ অংক ভাইয়ের সাথে নজিবুল্লাহ মাস্টারের দেখা করার সময় চলে এসেছে। টিনা, তন্বী, পৃথ্বী ও বান্টি সবাই খুব চিন্তিত এই ভেবে যে, অংক ভাইয়াকে নজিবুল্লাহ মাস্টার অনেক অপমান করবে।

পরের দিন, অংক ভাইয়া আর নজিবুল্লাহ মাস্টার মুখোমুখি হয়।

মুখোমুখি হওয়ার পর, মুজিব উল্লাহ মাস্টার এর ভিতরে একটা পরিবর্তন দেখা যায়। সে কখনোই কোনো শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করতে থামাননি এবং তিনি সেরা শিক্ষকের পুরস্কার পেয়েছিলেন। আর অংক ভাইয়া তার আম্মুর প্রমোশনের কারণে অন্য শহরে চলে যায়।সেজন্য এই শহরে খুব কম এসেছিলেন, তবে যে কয়বার এসেছিলেন সেই প্রতিবারই টিনা, তন্নী, বান্টি, পৃথ্বী সবার সাথে দেখা করে গেছেন।

আপনার হয়তো কৌতুহল যাচ্ছে যে সেদিন কি ঘটেছিল? কিন্তু অংক ভাইয়া ও নজিবুল্লাহ মাস্টার এর মধ্যে কি ঘটনা ঘটেছে, সেটা আমি বলবো না। আরও, আপনারা হয়তো খেয়াল করেছেন, আমি সকলের এক একটা অদ্ভুত নাম ছিল সেই নামের রহস্যগুলো বলি নি। সেটা জানার জন্য আপনাদেরকে বইটা পড়তে হবে।

আমার প্রিয় উক্তিসমূহ

  1. মেধা, প্রতিভা, কর্মদক্ষতার থেকে বহু দামী হলো অন্যের জন্য মমতা, অন্যের থেকে পাওয়া ভালোবাসা।
  2. জানা আর না জানা ভেতরে পার্থক্য শুধু ওই চিন্তাই সময়টা।
  3. যে মানুষটাকে দেখলে তোমার মনে হয়, সে অনেক বড় বড় জিনিস পারে, ভালো করে খেয়াল করে দেখলে দেখবে, সে আসলে খুব ছোট ছোট কিছু কৌশল জানে, অনেকগুলো ছোট ছোট কাজ সুন্দর করে করতে পারে।
  4. শিক্ষক যতই ভালো হোক না কেন, তাকে সরাসরি বিশ্বাস করে নেবে না। একবার নিজে ভাববে, তিনি এমন কেন বললেন, এটা কেন হল, এটা কি আসলেই ঠিক?
  5. কোন কিছু না জানা অন্যায় কিছু না। জানার আগ্রহ নষ্ট করে ফেলাটা অন্যায়। এই যে তুমি জানতে চেয়েছ আমার কাছে, এতেই অনেকখানি এগিয়ে গেলে তুমি!
  6. আমরা যা রেখে যেতে পারি সেটা হল আইডিয়া, চিন্তা। ভাবনার গুলোই আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
  7. প্রশ্নের ভালো-খারাপ নিয়ে ভেব না, প্রশ্ন করাটাই বেশি জরুরি। কৌতুহল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার! কখনোই কোনো বন্ধুকে প্রশ্ন করার সময় থামাবে না। এমনকি কোনো শিক্ষকও যদি তোমায় থামিয়ে দিতে চায়, ধরে নিবে সে নিজেই হয়তো ভালো করে ব্যাপারটা জানে না। এমন হলে অন্য কোন ভাবে জানার চেষ্টা করবে, তাই বলে প্রশ্নটাকে কখনোই মেরে ফেলবে না!
  8. একটা প্রশ্ন মেরে ফেলা মানে ভবিষ্যতের একজন চিন্তাশীল মানুষকে ধ্বংস করে দেওয়া।
  9. চিন্তা করাটাই জরুরী, উত্তর পাওয়ার থেকেও বেশি। গন্তব্য নয়, পথটাই আসল।
  10. আমরা মানুষ- যুক্তি দিয়ে যা বুঝি তাকে যখন আবেগ দিয়ে অনুভব করি, সেই জ্ঞানটা আমাদের অনেক বেশি মানসিক শক্তি যোগায়, এগিয়ে নিয়ে যায় আরো অনেক দূর!

শেষ কথা

এখন শেষ কথা হল যে, এই বইটি কাদের পড়া উচিত? আমার মতে, এটি যারা গণিত ভালোবাসেন বা গণিত পরান তাদের পড়া উচিত এবং যারা গণিতকে ভয় করেন, গণিত দেখলে জ্বর এসে যায়, মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়, তাদের অবশ্যই অবশ্যই এই বইটি পড়া উচিত। কারণ এই বইটি পড়লে তার গণিত সম্পর্কে একটু ধারনা চেঞ্জ হয়ে যাবে এবং গণিতের প্রতি একটা ভালোবাসা জন্মাবে।

--

--

Akibur Rahman (Akib)

MERN Stack Developer | Book lover | Also a Procrastinator